অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন-১ - কম্পিউটার সফটওয়্যারের মৌলিক ধারণা | NCTB BOOK

কোনো বিশেষ ধরনের কাজ সম্পাদন করতে যে বিশেষ কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয় সেটিকে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার বলে। এসব সফটওয়্যারকে সাধারণত প্যাকেজ প্রোগ্রামও বলা হয়। যেমন— লেখালেখির কাজের জন্য ওয়ার্ড প্রসেসর, হিসাব-নিকাশের জন্য এক্সেল প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয়।

অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারকে দুই ভাবে ভাগ করা যায়। যথা-

১. সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ও

২. অ্যাপ্লিকেশন স্পেসিফিক বা ব্যবহার সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম।

১. সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম (General Application Program) : বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তৈরি যে সমস্ত বাণিজ্যিক সফটওয়্যার পাওয়া যায় তাকে সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম বলে। সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের সাহায্যে ব্যবহারকারী প্রাত্যহিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ নানা সমস্যা সমাধান করতে পারে। যেমন- ওয়েব ব্রাউজিং, ই-মেইল, ওয়ার্ড প্রসেসিং, স্প্রেডশিট প্রোগ্রাম, ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট, গ্রাফিক্স এবং ডেস্কটপ পাবলিশিং ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। উল্লেখযোগ্য সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামগুলো হচ্ছে-

• সফটওয়্যার স্যুইট : এম এস অফিস, লোটাস স্মার্ট স্যুইট, কোরল ড্র ইত্যাদি ।

• ওয়েব ব্রাউজার : ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, নেটস্কেপ নেভিগেটর, নেটস্কেপ কমিউনিকেটর ইত্যাদি । 

• ইলেকট্রনিক মেইল বা ই-মেইল, ইন্টারনেট মেইল, ইউডোরা প্রো, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ইত্যাদি।

• ডেস্কটপ পাবলিশিং : পেজ মেকার, পাবলিশার, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর প্রভৃতি।

• ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম: ওরাকল, এক্সেস, ডিবেজ ফক্সপ্রো ইত্যাদি ।

২. অ্যাপ্লিকেশন সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম বা কাস্টমাইজড প্রোগ্রাম (Application Customized Program) : কোনো বিশেষ বা সুনির্দিষ্ট সমস্যা সমাধান করার জন্য যে সমস্ত প্রোগ্রাম রচনা করা হয় তাকে কাস্টমাইজড প্রোগ্রাম বলে। সমস্যার ধরণ ও প্রকৃতি অনুসারে ব্যবহারকারী কাস্টমাইজড প্রোগ্রাম তৈরি করে থাকেন। এ ধরনের প্রোগ্রাম সাধারণত উচ্চস্তরের ভাষায় লেখা হয় অথবা কোনো সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে ব্যবহারকারী তার প্রয়োজনানুসারে প্রোগ্রাম তৈরি করে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ-ব্যাংকিং কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক সফটওয়্যার, একাউন্টিংয়ের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের একাউন্টিং সফটওয়্যার, সেলস ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার, ইলেকট্রনিক কমার্স, ইনভেন্টারি কন্ট্রোল সফটওয়্যার, পেরোল সিস্টেম, টিকেট রিজার্ভেশন সিস্টেম সফটওয়্যার ইত্যাদি হচ্ছে অ্যাপ্লিকেশন সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম বা কাস্টমাইজড প্রোগ্রাম।

অ্যাপ্লিকেশন প্যাকেজ প্রোগ্রাম

কম্পিউটার ব্যবহারকারী তাঁর প্রয়োজন মতো নিজেই প্রোগ্রাম রচনা করতে পারেন। এজন্য অবশ্যই তাঁকে অভিজ্ঞ প্রোগ্রামার হতে হয়। তবে সকল ব্যবহারকারী অভিজ্ঞ প্রোগ্রাম ডেভেলপার নয়। ফলে সকল ব্যবহারকারীর পক্ষে প্রোগ্রাম তৈরি করা সম্ভব হয় না। ব্যবহাকারীদের চাহিদা অনুধাবন করে কম্পিউটার সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অনেক বাণিজ্যিক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা কিছু সাধারণ প্রোগ্রাম তৈরি করে বাজারজাত করে থাকেন। এসব প্রোগ্রামকে সফটওয়্যার প্যাকেজ অথবা প্যাকেজ প্রোগ্রাম বলে। বাংলা ফন্টসহ শহীদ লিপি প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত এমএস ওয়ার্ড (MS Word) এবং ওয়ার্ড পারফেক্ট (Word Perfect) বাণিজ্যিক প্যাকেজ প্রোগ্রামের উদাহরণ। সংগঠনের বিচারে বাণিজ্যিক প্যাকেজ প্রোগ্রামসমূহকে দুইভাবে ভাগ করা যায়। যথা—

১. একক-প্রক্রিয়া প্যাকেজ

২. একীভূত (ইন্টিগ্রেটেড) প্যাকেজ

১. একক প্রক্রিয়া প্যাকেজ

শুধুমাত্র একটি সমস্যা সমাধানের জন্য একক-প্রক্রিয়া প্যাকেজ প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয়। প্রোগ্রাম রচনার পরিবর্তে এসব প্যাকেজ প্রোগ্রাম ব্যবহার করে সহজে সমস্যা সমাধান করা যায়। বাংলাফন্টসহ শহীদ লিপি প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত ওয়ার্ডস্টার, ডকসরাইটার, ওয়ার্ড, ওয়ার্ড-পারফেক্ট এবং গ্রাফ বা চার্ট, পাই-চার্ট তৈরির জন্য ব্যবহৃত গ্রাফ, হাভার্ড গ্রাফিক্স, গ্রাফ-প্লান একক-প্রক্রিয়া প্যাকেজ প্রোগ্রামের উদাহরণ। একক- প্রক্রিয়া প্যাকেজ প্রোগ্রাম দিয়ে পৃথকভাবে এসব কাজ করতে হলে প্রতিটি প্রক্রিয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রাম ও ডেটা ফাইলকে কম্পিউটারে নিয়ে প্রক্রিয়াকরণ করতে হয়। এতে বিপত্তিও ঘটতে পারে; অনেক সময় একটি প্রোগ্রাম দিয়ে তৈরি ডেটা বা ফাইল অন্য প্রোগ্রামের জন্য গ্রহণযোগ্য হয় না।

২. একীভূত (ইন্টিগ্রেটেড) প্যাকেজ

একাধিক প্রক্রিয়া সমাধানের জন্য অনেক রকম বাণিজ্যিক প্যাকেজ পাওয়া যায়। এ ধরনের প্যাকেজ প্রোগ্রামকে একীভূত প্যাকেজ প্রোগ্রাম বলে। একীভূত প্যাকেজে বিভিন্ন প্রক্রিয়া সমাধানের জন্য অনেক রকম প্রোগ্রামের সমন্বয় করা হয়। একই ফাইলের ডেটা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হলে একীভূত প্যাকেজ প্রোগ্রাম সহায়ক কাজ করে। একীভূত প্যাকেজ প্রোগ্রামের সহায়তায় কম্পিউটার ব্যবহারকারীর কর্মদক্ষতা বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব। তবে একীভূত প্যাকেজের জন্য বৃহৎ মেমোরি দরকার হয়। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হলে একীভূত প্যাকেজের জন্য গতিসহ আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হতে পারে। এ হিসাবে শুধু বহুল ব্যবহৃত প্রক্রিয়ার জন্য একক-প্রক্রিয়া প্যাকেজ ব্যবহার করা সুবিধাজনক হতে পারে।

প্যাকেজ সফটওয়্যারের কিছু বৈশিষ্ট্য

• প্যাকেজ সফটওয়্যারগুলো সাধারণত কমন (Common) কোনো কাজের সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি করা হয়। 

• কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরিতে দক্ষ যে কোনো 'Team' যে কোনো প্যাকেজ সফটওয়্যার তৈরি করতে পারেন। তবে এটি সময় সাপেক্ষে ও ব্যয়বহুল।

• প্যাকেজ সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত তার ক্রেতাদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে নতুন ভার্সন বাজারে ছাড়েন। ফলে প্রচলিত প্যাকেজ সফটওয়্যারগুলোর কারিগরি দক্ষতা অনেক বেশি হয় এবং আকারেও এগুলো অনেক বড়।

• সহজে ব্যবহার করতে পারে বলে এসব সফটওয়্যারের জনপ্রিয়তাও বেশি। তুলনামূলকভাবে কম দামে প্যাকেজ সফটওয়্যার যে কেউ বাজার থেকে কিনতে পারে।

প্যাকেজ সফটওয়্যারের কিছু সুবিধা

• সফটওয়্যার তৈরির জটিলতা ও খরচ থেকে মুক্ত। যে কোনো সময় এসব সফটওয়্যার কিনে সাথে সাথেই প্রয়োজন মেটানো যায়।

• এসব সফটওয়্যার তৈরি করার পর বহুবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় বলে এর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি।

• প্যাকেজ সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কারিগরি সেবা পাওয়া যায়।

• প্যাকেজ সফটওয়্যারের কিছু অসুবিধা

• এটি ব্যবহারকারীর সার্বিক চাহিদা পূরণ নাও করতে পারে। কিন্তু ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী বিক্রেতা পরিবর্তন করতে বাধ্য নয়।

• প্যাকেজ সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাজের গুণাগুণ এবং সেবার উপর ব্যবহারকারীর খুব কম নিয়ন্ত্রণ থাকে ।

• প্যাকেজ সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নতুন ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা এবং পুরাতন ক্রেতাকে ধরে রাখার জন্য প্রতিনিয়ত নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত ভার্সন বাজারজাত করেন। সে ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী খুব বেশি মাত্রায় প্যাকেজ সরবরাহকারীর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।

Content added || updated By
Promotion